জাপানি সংগঠন নিহোন হিদানকিও জিতেছে ২০২৪ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার
অবশেষে সময় আসলো— জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকির পারমাণবিক বোমার আক্রমণের ক্ষতিগ্রস্থদের সংগঠনকে দেওয়া হলো ২০২৪ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার।
পারমাণবিক অস্ত্র মুক্ত পৃথিবীর জন্য নিহোন হিদানকিও নামের একটি তৃণমূল আন্দোলনের সংগঠন , তাদের প্রচেষ্টার স্বীকৃতি পেল।
নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি জানিয়েছে, এই ‘হিবাকুশা’ নামে পরিচিত বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করা হয়েছে যারা পারমাণবিক অস্ত্র মুক্ত পৃথিবী গঠনের লক্ষ্যে তাদের আপ্রাণ প্রচেষ্টা এবং তাদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিশ্বকে প্রমাণ করার জন্য যে পারমাণবিক অস্ত্র কখনোই আবার ব্যবহার করা উচিত নয়।
এই সংগঠনটি ১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক আক্রমণের পর জাপানে আত্মপ্রকাশ করে এবং পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত প্রতিষ্ঠায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কমিটি বলেছে, “এই ঐতিহাসিক সাক্ষীরা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, শিক্ষামূলক প্রচারণা পরিচালনা করে এবং পারমাণবিক অস্ত্রের প্রসার ও ব্যবহারের বিপদ সম্পর্কে জরুরি সতর্কবার্তা জানিয়ে পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনমত গড়ে তুলতে সহায়ক হয়েছে।”
নোবেল কমিটি উল্লেখ করেছে “হিবাকুশারা আমাদের অবর্ণনীয় কষ্ট ও যন্ত্রণা সম্পর্কে ধারণা দিতে, অচিন্তনীয় বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে এবং পারমাণবিক অস্ত্রের মারাত্মক প্রভাব অনুধাবন করতে সহায়তা করেন।”
হিরোশিমার পারমাণবিক বোমা হামলার শিকার এবং নিহোন হিদানকিও-এর সহ-সভাপতি তোশিয়ুকি মিমাকি হিরোশিমার সিটি হলে সংবাদটি পেয়ে এই বলে প্রতিক্রিয়া জানান—“এটা যেন একটা স্বপ্নের মতো,” এবং তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না বলে নিজের গালে চিমটি কাটেন, যেটা জাপানের জাতীয় টেলিভিশন NHK ভিডিওতে প্রচার করা হয়।
তিনি বলেন, “পারমাণবিক অস্ত্র নির্মূল এবং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বকে আবেদন জানাতে হবে, যেমন আমরা সবসময় করে এসেছি”। “আমরা নোবেল শান্তি পুরস্কারের উপযুক্তভাবে কাজ করতে চাই।”
এই পুরস্কার এমন এক সময়ে আসলো যখন বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক শক্তিগুলো তাদের অস্ত্রসম্ভার আধুনিকায়ন ও উন্নত করছে এবং নতুন দেশগুলো পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এর মধ্যে যদি আমেরিকা ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা প্রদান চালিয়ে যায় তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছেন ।
১৯৪৫ সালে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র ছিল, কিন্তু বর্তমানে আটটি দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী—যেগুলো অনেক গুণ শক্তিশালী। এছাড়া, ইসরায়েলকে গোপন পারমাণবিক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া বা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমিত পারমাণবিক সংঘর্ষও লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
ইরানি কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বলেছেন যে তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রায় সব দক্ষতা অর্জন করেছে। যা সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেই-এর দীর্ঘদিনের প্রতিশ্রুতি—যে তিনি গণবিধ্বংসী অস্ত্র বানাবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন—কিন্তু এখন তারা এটি পুনর্বিবেচনার কথা ভাবছে।
নোবেল কমিটি বলেছে, হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে আক্রমণের ৮০তম বার্ষিকীর এক বছর আগে এই পুরস্কার দেওয়া সময়োপযোগী (কেন এতদিন পরে তাঁদের হুশ হলো সেই প্রশ্ন থেকেই যায়)। এই পুরস্কার ক্ষতিগ্রস্থদের এবং তাদের পারমাণবিক যুদ্ধের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তাগুলোকে স্বীকৃতি দিতেই এসেছে।
নোবেল কমিটি বলেছে, “একদিন হিবাকুশারা আর আমাদের মধ্যে থাকবেন না, তবে এই ভয়ংকর স্মৃতির সংস্কৃতি এবং নতুন প্রজন্মের প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে জাপানে তারা যে অভিজ্ঞতা ও বার্তা রেখে গেছেন তা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে”। “এভাবে তারা পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে জনমত ধরে রাখতে সহায়তা করছে—যা মানবজাতির জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের পূর্বশর্ত।”
এই পুরস্কারের অর্থমূল্য ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার, যা প্রায় ১ মিলিয়ন ডলারের সমান।